তোমরা জান যে আমাদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হলো বস্ত্র বা কাপড়। এই বস্ত্ৰ আমাদেরকে শীতের হাত থেকে রক্ষা করে এবং আমরা বস্ত্র দিয়ে সুন্দর পোশাক তৈরি করি। বস্ত্র বা কাপড়-চোপড় আধুনিক সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তোমরা কি জান, বস্ত্র বা কাপড় কীভাবে তৈরি হয়? সব বস্ত্রই তৈরি হয় সুতা থেকে। আবার সুতা তৈরি হয় তন্তু থেকে। তন্তু ক্ষুদ্র আঁশ দিয়ে তৈরি। তাই তন্তু বলতে আমরা আঁশজাতীয় পদার্থকেই বুঝি, তবে বস্ত্রশিল্পে তন্তু বলতে বুনন এবং বয়নের কাজে ব্যবহৃত আঁশসমূহকেই বুঝায়। তন্তু দিয়ে সুতা আর কাপড় ছাড়াও কার্পেট, ফিল্টার, তড়িৎ নিরোধক দ্রব্য ইত্যাদি বিভিন্ন রকম পদার্থ তৈরি করা হয়।
আমাদের অতিপ্রয়োজনীয় তন্তু উৎস অনুযায়ী দুই রকম হয়। সুতি কাপড় তৈরির জন্য তুলা (Cotton), পাট, লিনেন, রেশম, পশম, উল, সিল্ক, অ্যাসবেস্টস, ধাতব তন্তু ইত্যাদি যেগুলো প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, সেগুলোকে আমরা প্রাকৃতিক তন্তু বলি। অন্যদিকে পলিস্টার, রেয়ন, ডেক্রন, নাইলন ইত্যাদি যেগুলো বিভিন্ন পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়, সেগুলো হলো কৃত্রিম তন্তু।প্রাকৃতিক তন্তুগুলোর মধ্যে আবার তুলা, পাট ইত্যাদি পাওয়া যায় উদ্ভিদ থেকে। তাই এদেরকে উদ্ভিদ তন্তু বলে। অন্যদিকে রেশম, পশম এগুলো পাওয়া যায় প্রাণী থেকে। তাই এদেরকে প্রাণিজ তন্তু বলে। আবার ধাতব তন্তু পাওয়া যায় প্রাকৃতিক খনিতে। তাই এদেরকে খনিজ তন্তু বলে।
অন্যদিকে কৃত্রিম তন্তু আবার দুরকমের হয়। সেলুলোজিক তন্তু এবং নন সেলুলোজিক তন্তু। তোমরা জান যে সেলুলোজ হলো একধরনের সূক্ষ্ম আঁশযুক্ত পদার্থ, যা দিয়ে উদ্ভিদ এবং প্রাণী কোষ তৈরি হয়। রেয়ন, এসিটেট রেয়ন, ভিসকোস রেয়ন, কিউপ্রা অ্যামোনিয়াম – রেয়ন, এগুলো সেলুলোজকে নানাভাবে প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় বলে এদেরকে সেলুলোজিক তন্তু বলে।যেসব কৃত্রিম তন্তু সেলুলোজ থেকে তৈরি না করে অন্য পদার্থের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি করা হয়, তারাই হলো নন-সেলুলোজিক তন্তু। নাইলন, পলিস্টার, পলি প্রোপিলিন, ডেব্ৰুন—এগুলো হলো নন সেলুলোজিক কৃত্রিম তন্তু।
৬.২.১ তন্তুর বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার
একটি পোশাক আরামদায়ক কি না তা নির্ভর করে এটি কী ধরনের কাপড় দিয়ে তৈরি তার ওপর। আবার কাপড় তৈরি হয় সুতা থেকে, যা আসে তন্তু থেকে। কাজেই তন্তুর বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে এখন ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম তন্তুর বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে নেওয়া যাক।
তুলা
গরমের দিনে আমরা সুতির পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি কেন? কারণ সুতির তাপ পরিবহন এবং পরিচলন ক্ষমতা বেশি। তুলার আঁশ থেকে সুতা তৈরি হয়। প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ তন্তুর মধ্যে প্রধান হলো সুতা। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে (চিত্র ৬.০১) সুতির তন্তুকে অনেকটা নলের মতো দেখায়। নলের মধ্যে যে সরু পদার্থটি থাকে তা প্রথম অবস্থায় 'লুমেন' (Lumen) নামক পদার্থে পূর্ণ থাকে। পরে আঁশগুলো ছাড়িয়ে নেওয়ার পর রোদের প্রভাবে শুকিয়ে যায় এবং নলাকৃতি তন্তুটি ধীরে ধীরে চ্যাপ্টা হয়ে ক্রমে
চিত্র ৬.০১ : অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে সুভিদু
একটি মোচড়ানো ফিতার মতো রূপ ধারণ করে। এই ফিতার মতো সুতির আঁশে ১০০ থেকে ২৫০টি পর্যন্ত পাক বা মোচড় থাকে।বস্ত্র বা কাপড় তৈরির সময় এই মোচড়ানো অংশ একে অপরের সাথে সুন্দরভাবে মিশে যায় বলে সুতি বস্ত্র টেকসই হয়। আপাতদৃষ্টিতে সুতি তেমন উজ্জ্বল নয়। তবে ময়েশ্চারাইজেশনের (moisturization ) মাধ্যমে একে উজ্জ্বল ও চকচকে করে তোলা যায়। সুতি তন্তুকে রং করা হলে সেটি পাকা রং হয় এবং তাপ ও ধোয়ার ফলে রংয়ের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। অজৈব এসিডের সংস্পর্শে সুতি তন্তু নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু অন্যান্য এসিডের সংস্পর্শে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। সুতির বস্ত্র ব্যবহারের তেমন বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয় না বলে এর অনেক ধরনের ব্যবহার রয়েছে। সুতি বস্ত্রের একটি প্রধান সীমাবদ্ধতা হচ্ছে এটি সংকুচিত হয়ে যায়।
রেশম (silk)
আগেকার দিনের রাজা-রানির পোশাক বলতে আমরা সিল্কের বা রেশমি পোশাকই বুঝি। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, বিলাসবহুল বন্ধ তৈরিতে রেশম ত ব্যবহৃত হয়। রেশমের প্রধান গুণ হচ্ছে এর সৌন্দর্য। তিন শতাধিক রঙের রেশম পাওয়া যায়। রেশম বা পলু পোকা নামে এক প্রজাতির পোকার গুটি থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রেশমের তন্তু আহরণ করা হয়। রেশম মূলত ফাইব্রেয়ন (Fibroln) নামের এক ধরনের প্রোটিন—জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি। প্রাকৃতিক প্রাণিজ তন্তুর মধ্যে রেশম সবচেয়ে শক্ত এবং দীর্ঘ। বিভিন্ন গুণাগুণের জন্য রেশমকে তস্তুর রানি বলা হয়। সূর্যালোকে রেশম দীর্ঘক্ষণ রাখলে এটি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। রেশম হালকা কিন্তু অনেক বেশি উষ্ণ এবং খুবই অল্প জায়গায় রেশমি বা সিল্কের কাপড় রাখা যায়।
পশম (Wool)
আমরা শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য যে পোশাকের কথা সবার আগে ভাবি, সেটি হচ্ছে পশম বা উলের পোশাক। ভাপ কুপরিবাহী বলে পশমি পোশাক শীতবস্ত্র হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়। নমনীয়তা, স্থিতিস্থাপকতা, কুঞ্চন প্রতিরোধের ক্ষমতা, রং ধারণক্ষমতা—এগুলো হচ্ছে উল বা পশমের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এই তক্ষুর মাঝে ফাঁকা জায়গা থাকে যেখানে বাতাস আটকে থাকতে পারে। বাতাস তাপ অপরিবাহী তাই পশম বা উলের কাপড় তাপ কুপরিবাহী। পশমি কাপড় পরে থাকলে শীতের দিনে শরীর থেকে তাপ বেরিয়ে যেতে পারে না, তাই এটি গায়ে দিলে আমরা গরম অনুভব করি। লঘু এসিড এবং ক্ষারে পশমের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে মথ পোকা খুব সহজে পশম তন্তু নষ্ট করে। এছাড়া কিছু ছত্রাক পশম তন্তুকে খুব সহজে আক্রান্ত করে নষ্ট করে দিতে পারে।
পশম একটি অভি প্রাচীন তন্তু। বিভিন্ন জাতের ভেড়া বা মেষের লোম থেকে পশম উৎপন্ন হয়। প্রায় ৪০ জাতের মেষ থেকে ২০০ ধরনের পশম তৈরি করা হয়। জীবন্ত মেষ থেকে লোম সরিয়ে যে পশম তৈরি করা হয়, তাকে বলে 'ফ্লিস উন' (Fleece wool)। মৃত বা জবাই করা মেষ থেকে যে পশম তৈরি করা হয়, তাকে বলে 'গুপ্ত উল' (Pulled wool)। মানুষের চুল ও নখে যে প্রোটিন থাকে, অর্থাৎ কেরাটিন (Keratin), সেটি দিয়ে পশম তন্তু গঠিত পশমের মধ্যে আলপাকা, মোহেরা, কাশ্মিও, ভিকুনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কৃত্রিম নন-সেলুলোজিক তন্তুর মাঝে নাইলন সর্বপ্রধান। সাধারণত এটিপিক এসিড এবং হেক্সামিথিলিন ডাই অ্যামিন নামক রাসায়নিক পদার্থের পলিমারকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাইলন তৈরি হয়। নাইলনকে প্রধানত দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়— নাইলন ৬৬ এবং নাইলন ৬।নাইলন খুব হালকা ও শক্ত। ভিজলে এর স্থিতিস্থাপকতা বিপুণ হয়। এটি আগুনে পোড়ে না, তবে পলে পিয়ে বোরাক্স বিজের Borax Bead এর মতো স্বচ্ছ বিদ্ধ গঠন করে। কার্পেট, দড়ি, টায়ার, প্যারাসুটের কাপড় ইত্যাদি তৈরি করতে নাইলন ব্যবহৃত হয়।
রেয়ন
কৃত্রিম তন্তুর মধ্যে রেয়ন (চিত্র ৬.০২) হলো প্রধান এবং প্রথম তন্তু। উদ্ভিজ্জ সেলুলোজ ও প্রাণিজ পদার্থ থেকে রেয়ন তৈরি করা হয়। তিন প্রকারের প্রধান রেরন হলো (১) ভিসকোস, (২) কিউপ্রামোনিয়াম এবং (৩) অ্যাসিটেট। এগুলো শুধু সুন্দর, উজ্জ্বল, মনোরম, অভিজাত এবং আকর্ষণীয় নয়, এগুলো মোটামুটি টেকসই। লঘু এসিডের সাথে তেমন কোনো বিক্রিয়া করে না কিন্তু ধাতব লবণে রেয়ন সহজে বিক্রিয়া করে। অধিক উত্তাপে রেয়ন গলে যায়। ভাই রেয়ন কাপড়ে বেশি গরম ইস্ত্রি ব্যবহার করা যায় না।
অ্যাসিটেট
ভিসকোস
কিউপ্রামোনিয়াম (আড়াআড়িভাবে
চিত্র ৬.০২: অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেয়ন তন্দুর ৰূপ
৬.২.২ তন্তু থেকে সুতা তৈরি
তন্তু দিয়ে কি সরাসরি কাপড় বানানো যায়? না, যায় না। তন্তু দিয়ে প্রথমে সুতা তৈরি করা হয়, অতঃপর সেই সুতা দিয়ে কাপড় তৈরি হয়। তন্তু থেকে কোন প্রক্রিয়ায় সুতা তৈরি হবে, সেটা নির্ভর করে তন্তুর বৈশিষ্ট্যের ওপর। একেক রকমের তন্তুর জন্য একেক রকম পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়। তাহলে এখন আমরা সুতা তৈরির বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে জেনে নিই ।
তন্তু সংগ্রহ
যেকোনো ধরনের সুতা তৈরির প্রধান ধাপ হলো তন্তু সংগ্রহ, তন্তুর উৎস অনুযায়ী সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন: তুলার বেলায় গাছ থেকে কার্পাস ফল সংগ্রহ করে বীজ থেকে তুলা আলাদা করে ফেলা হয়। এই প্রক্রিয়ার নাম হলো জিনিং। জিনিং প্রক্রিয়ায় পাওয়া তন্তুকে বলে কটন লিন্ট। অনেকগুলো কটন লিন্ট একসাথে বেঁধে গাঁট তৈরি করা হয়। এই গাঁট থেকেই স্পিনিং মিলে সুতা কাটা হয়।
তোমরা বল দেখি, পাট বা পাটজাতীয় (যেমন: শণ, তিসি ইত্যাদি) গাছ থেকে কী একই পদ্ধতিতে তন্তু সংগ্রহ করা যাবে? না, যাবে না। কারণ, এক্ষেত্রে বীজ থেকে তন্তু সংগ্রহ করা হয় না, তন্তু সংগ্রহ করা হয় সরাসরি গাছের বাকল থেকে। এর জন্য গাছ কেটে পাতা ঝরানোর জন্য প্রথমে কয়েক দিন মাঠেই একসাথে জড়ো করে রাখা হয়। এতে সাধারণত ৫-৮ দিন সময় লাগে। এলাকাভেদে জড়ো করে রাখা গাছকে চেল্লা বা পিল বলে। এভাবে জড়ো করে রাখার ফলে উদ্ভিদের পাতায় পচন ধরে, তাই একটু ঝাঁকুনি দিলেই সেগুলো গাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়। তবে খেয়াল রাখতে হয় গাছের পাতা যেন পুরোপুরি পচে না যায়। তখন পচা পাতা গাছের গায়ের সাথে লেগে যায়, যা সরানো কষ্টসাধ্য। পাতা ঝরানোর পর গাছগুলো একসাথে আটি বেঁধে ১০-১৫ দিন পানিতে ডুবিয়ে পচানো হয়। পচে গেলে খুব সহজেই গাছ থেকে আঁশ বা তন্তু আলাদা করা যায়। গাছ থেকে আঁশ আলাদা করে পানিতে ধুয়ে সেগুলো রৌদ্রে শুকানো হয়। শুকনো আঁশ একত্রিত করে গাঁট বা বেল বাঁধা হয়। তুলার মতোই এই গাঁট বা বেল সুতা কাটার জন্য স্পিনিং মিলে নেওয়া হয়।
এবার প্রাণিজ তন্তু কীভাবে সংগ্রহ করা হয়, সেটা দেখা যাক। তোমরা আগেই জেনেছ যে রেশমি সুতা তৈরি হয় রেশম তন্তু থেকে। এক্ষেত্রে সরাসরি সুতা উৎপাদিত হয়, অন্য কোনো প্রক্রিয়ার দরকার হয় না। কৃত্রিম তন্তুর বেলাতেও কিন্তু রেশম তন্তুর মতো সরাসরি সুতা তৈরি হয়। কিন্তু উল বা পশমি সুতার জন্য দরকারি প্রাণিজ তন্তু অর্থাৎ প্রাণিজ পশম, লোম বা চুল। এগুলো সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন প্রাণীর শরীর থেকে কেটে নিয়ে। এভাবে প্রাণীর দেহ থেকে লোম, পশম, চুল কেটে নিলে কি তাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়? আসলে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না, পশম বা লোম কেটে নেওয়ার পর কিছু দিনের মধ্যে আবার লোম গজায়, যা বড় হলে আবার কেটে সংগ্রহ করা হয়। তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ যে একই পশুর গা থেকে বারবার পশম সংগ্রহ করা যায়। আমরা আগেই বলেছি, এভাবে সংগ্রহ করা পশম, লোম বা চুলকে ফ্লিস উল বলা হয়। এই ফ্লিস উল বস্তায় করে সুতা কাটার জন্য স্পিনিং মিলে আনা হয়।
সুতা কাটা (Spinning ) সুতা কাটা হয় স্পিনিং মিলে (চিত্র ৬.০৩)। সাধারণত একটি মিল বা কারখানার এক ধরনের তন্তু থেকে সুতা কাটা হয়। কারণ সুতা কাটার যে বিভিন্ন ধাপ রয়েছে, তা একেক ধরনের তন্তুর জন্য একেক রকম। এজন্য ভিন্ন ভিন্ন তঙ্কু থেকে তৈরি সুতার কারখানাও আলাদা। তবে তন্তুভেদে সুতা কাটার পদ্ধতিতে ভিন্নতা থাকলেও কিছু কিছু মিলও আছে। এখন আমরা তন্তু থেকে সুতা কাটার পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
ব্লেন্ডিং ও মিক্সিং
কারখানায় আনা তন্তুর বেল বা গাঁট ব্লেন্ডিং রুমে নিয়ে প্রথম খুলে ফেলা হয়। এরপর বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে এক সাথে গুচ্ছাকারে থাকা তন্তুকে ভেঙে যথাসম্ভব ছোট ছোট গুচ্ছে পরিণত করা হয়। এ সময় তন্তুর সাথে থাকা ময়লার ছোট ছোট টুকরা, বীজ বা পাতার ভাঙা কোনো অংশ ইত্যাদিও দূর করা হয়। এরপর বিভিন্ন রকম তুলার একটি মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এই মিশ্রণ তৈরি করা হয় কেন? তার কারণ হলো, গুণে এবং মানে ঠিক একই রকম তুলা সব সময় পাওয়া সম্ভব হয় না। বিভিন্ন রকম তুলার মিশ্রণ না করলে একেক সময় একেক রকম সুতা তৈরি হবে, কখনো ভালো, কখনো মন্দ অর্থাৎ সুতার মান এক হবে না। এছাড়া বিভিন্ন রকম তুলা মিশিয়ে সুতা তৈরি করলে উৎপাদন খরচও কম হয়। এটি বাংলাদেশের জন্য বেশি প্রযোজ্য। কারণ এখানে বাণিজ্যিকভাবে তুলার উৎপাদন হয় না বললেই চলে। বেশির ভাগ তুলা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। একেক দেশের তুলার মানও একেক রকম হয়। একই রকম তুলার যোগান পাওয়া বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। এজন্য বিভিন্ন রকম তুলা সংগ্রহ করে সেগুলোর মিশ্রণ তৈরি করা হয়। বেল বা গাঁট থেকে তুলার এই মিশ্রণ তৈরিই হলো ব্লেন্ডিং এবং মিক্সিং। তবে পাট ভল্লুর বেলায় এই প্রক্রিয়াকে ব্যাচিং (Batching) বলে।
কার্ডিং ও কম্বিং (Carding & Combing) সূতা কাটার দ্বিতীয় ধাপ হলো কার্ডিং ও কম্বিং । তুলা, লিনেন, পশম—এসব তন্তুর বেলায় এই ধাপটি প্রয়োগ করা হয়। ভত্তুর বৈশিষ্ট্য ও দৈর্ঘ্য অনুযায়ী কার্ডিং এবং কম্বিংয়ের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র ঠিক করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহার অনুপযোগী অতি ছোট তন্তু বাদ দেওয়া হয় এবং ধুলাবালি বা ময়লার কণা থাকলে সেগুলোও দূর করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধু কার্ডিং করলেই চলে। তবে মিহি মসৃণ ও সন্তু সুতা তৈরি করতে হলে কম্বিং দরকার হয়। লিনেন তন্তুর জন্য বিশেষ ধরনের কম্বিং করা হয়, যা হেলকিং নামে পরিচিত। হেলকিং করলে সুতা অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং মিহি হয়। কার্ডিং ও কম্বিং করে প্রাপ্ত তন্তু পাতলা আস্তরের মতো হয় এবং এটিকে স্লাইভার (Sliver) বলে। এ স্লাইভার পাকালেই সুতা তৈরি হয়। পাকানোই হলো মূলত স্পিনিং। এ পর্যায়ে স্লাইভারকে টেনে ক্রমশ অধিকতর সরু করা হয়। একসময় স্লাইভারের শেষ প্রান্তে মাত্র কয়েক গোছা তন্তু বিদ্যমান থাকে। এভাবে পরিবর্তিত স্লাইভারকে মোচড়ানো হয় বা পাক দেওয়া হয়। স্লাইভারকে টেনে সরু করার প্রক্রিয়া হলো রোডিং আর টুইস্টিং (Twisting)। স্লাইভারকে পাক দেওয়া বা মোচড় দেওয়ার ফলে তন্তুগুলো একে অন্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে লেগে যায় এবং সুতায় পরিণত হয়। পাকানো কিংবা মোচড় কম-বেশি করে সুতা শক্ত বা নরম করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই মোচড় বেশি দিলে সুতা বেশি শক্ত হয়, তবে মোচড় অতিরিক্ত হলে সুতা ছিঁড়ে যেতে পারে। পাকানো বা মোচড়ের পরিমাণ নির্ভর করে মূল তন্তুর বৈশিষ্ট্যের উপর। সাধারণত লম্বা তন্তুর বেলায় (যেমন: পাট বা লিনেন) তুলনামূলকভাবে বেশি মোচড় দিতে হয়। টুইস্ট কাউন্টার (Twist Counter) নামের একধরনের যন্ত্রের সাহায্যে এ কাজ করা হয় ।
রেশম তন্তু থেকে রেশম সুতা তৈরি রেশম পোকা থেকে তৈরি হয় একধরনের গুটি। একে কোকুন (Cocoon) বলে। পরিণত কোকুন বা গুটি সাবান পানিতে লোহার কড়াইয়ে সেদ্ধ করা হয়। এতে কোকুনের ভেতরকার রেশম পোকা মরে যায় এবং গুটি কেটে বের হয়ে রেশমের গুটি নষ্ট করতে পারে না। সিদ্ধ করার কারণে কোকুন নরম হয়ে যায় এবং ওপর থেকে খোসা খুব সহজেই আলাদা হয়ে যায়। খোসা উঠে গেলে রেশমি তন্তুর প্রান্ত বা নাল পাওয়া যায়। এই নাল ধরে আস্তে আস্তে টানলে লম্বা সুতা বের হয়ে আসে (চিত্র ৬.০৪)। চিকন বা মিহি সুতার জন্য ৫-৭টি কোকুনের নাল আর মোটা সুতার জন্য ১৫-২০টি কোকুনের নাল একত্রে করে টানা হয়। এ কাজে চরকা ব্যবহার করা হয়। ছবিতে চরকার সাহায্যে কোকুন থেকে সুতা তৈরি দেখানো হয়েছে। নালগুলো একত্রিত করলে এদের গায়ে লেগে থাকা আঠার কারণে একটি আরেকটির সাথে লেগে গিয়ে সুতার গোছা তৈরি হয়।
কৃত্রিম তন্তু থেকে সুতা তৈরি কৃত্রিম তন্তু থেকে সুতা তৈরির পদ্ধতি প্রায় সব তন্তুর ক্ষেত্রে একই রকম। একের অধিক ক্ষুদ্র আঁশ ও উপযুক্ত দ্রাবকের সাহায্যে ঘন ও আঠালো দ্রবণ তৈরি করা হয়। এই দ্রবণ হলো স্পিনিং দ্রবণ। এই স্পিনিং দ্রবণকে স্পিনারেট (চিত্রে) নামক বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে অতি ক্ষুদ্র ছিদ্রপথে উচ্চ চাপে প্রবাহিত করা হয়। দ্রবণকে জমাট বাঁধানোর জন্য এর সাথে প্রবাহপথে উপযুক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এতে স্পিনারেট থেকে সুতার দীর্ঘ নাল বের হয়ে আসে, যা সরাসরি ব্যবহারযোগ্য। এই সুতা কাপড় তৈরি বা বয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়।
রেশম পোকার ডিম
ডিম ফুটে বের হওয়া মধ
কোকুন
কোকুন থেকে বের হওয়া আঁশ
পরিণত কোকুন সাবান পানিতে সিদ্ধ হচ্ছে
প্রতিটি মধ তার চারপাশে কোকুন তৈরি করল
রেশম রঙ করা হচ্ছে
স্পিনারেটে সুতা তৈরি হচ্ছে
সুতা থেকে কাপড় বোনা হচ্ছে
চিত্র ৬.০৪: রেশম তন্তু থেকে সুতা তৈরি
বিভিন্ন ধরনের সুতার বৈশিষ্ট্য
সব ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে সুতার বৈশিষ্ট্য তার তন্তুর বৈশিষ্ট্যের মতো। তোমরা যেহেতু তন্তুর বৈশিষ্ট্য জেনেছ, তাই নিশ্চয়ই সুতার বৈশিষ্ট্য কেমন হবে সেটি বুঝতে পারছ।
অনুসন্ধান
কাজ: তাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন প্রকার সুতার বৈশিষ্ট্য নির্ণয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: সিল্ক, উল, সুতি কাপড়, পলিস্টার কাপড়, নাইলন ইত্যাদি কাপড় বা সুতা, একটি মোমবাতি ও দিয়াশলাই।
পদ্ধতি: দিয়াশলাই দিয়ে মোমবাতি জ্বালাও। এবার একে একে কাপড় বা সুতা দিয়ে নিয়ে পুঁড়িয়ে দেখ কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে। সুতি কাপড়ের বেলায় কী ঘটল? কাপড় খুব দ্রুত পুড়ে গেল। কোনো পথ পাওয়া গেল কি? হ্যাঁ, কাগজ পোড়ালে যে রকম পদ্ধ পাওয়া যায়, অনেকটা সে রকম গন্ধ পাওয়া গেল। কারণ হলো, কাগজে যেমন সেলুলোজ থাকে, তুলা দিয়ে তৈরি সুতি কাপড়েও তা থাকে। আর সে কারণেই একই রকম গন্ধ পাওয়া যায়। নাইলন পুড়িয়ে কী দেখলে? সুতি কাপড়ের মতো এটিও কি দ্রুত পুড়ে গেল? না, অতটা দ্রুত পুড়ল না, ধীরে ধীরে পুড়ল। পোড়া শেষে একটি গুটির মতো তৈরি হলো, যা সুতি কাপড়ের বেলায় হয়নি। আবার কাগজ পোড়ানোর মতো গন্ধও পাওয়া গেল না, কারণ নাইলন সেলুলোজ থেকে তৈরি হয় না। এভাবে তোমরা সবগুলো কাপড় ও সুতার বৈশিষ্ট্য টেবিল করে খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
Read more
আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago